বিলিয়ে দেয়া

রেড হ্যাট কিভাবে নতুন এক অর্থনীতির খোঁজ পেয়েছিলো এবং নতুন এক ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে অবদান রেখেছিল

রবার্ট ইয়াং

ওপেন-সোর্সের বাণিজ্যিক সফটওয়্যারের নেতৃত্বস্থানীয় কোম্পানীর একজন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে, আমি যাই বলিনা কেন সেটি একাডেমিক গবেষণা অথবা এনালইসিসের উদ্দেশ্যকে প্রভাবিত করার নিমিত্ত হয়। সংশয়বাদী পাঠক লেখাটিকে বিষয়ভিত্তিক গবেষণা পেপার হিসেবে গণ্য করবেন না, তবে এটি হতে পারে রেড হ্যাট সফ্টওয়্যার, ইনকোপরেশনের অগ্রগতিকে প্রভাবিত করেছে এমনসব মুহুর্ত এবং ঘটনায় আল‌োকসম্পাতকারী কৌতূহলীউদ্দিপক, আকর্ষণীয় গল্পসমুহের একটি সংগ্রহ।

রেড হ্যাট কোথায় থেকে আসলো?

লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম (1993) এর শুরুর সময়ে, আমরা ছিলাম একটি ছোট সফটওয়্যার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। আমরা ওয়ালনাট ক্রিক এবং ইনফোম্যাজিকের মত ভেন্ডরদের মাধ্যমে ইউনিক্স এর নানান অ্যাপ্লিকেশন, বই, এবং কম খরচে সিডি-রম অফার করতাম। ইউনিক্স এর প্রচলিত অফার ছাড়াও, এই ভেন্ডররা আরেকধরনের অফার দেয়া শুরু করেছিল: লিনাক্স সিডি-রম। সেই লিনাক্স সিডি আমাদের জন্য বেস্টসেলার হয়ে উঠল। আমরা যখন জানতে চাইলাম যে, লিনাক্স জিনিসটি কোথা থেকে আসছে? উত্তরে জানলাম যে, “প্রোগ্রামারদের নিকট থেকে তাদের দক্ষতা অনুযায়ী, ব্যবহারকারীদের জন্যে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী.”

বার্লিন প্রাচীরের পতন থেকে আমরা যদি কিছু শিখে থাকি, সেটি হচ্ছে শুধুমাত্র সমাজতন্ত্র কোন টেকসই অর্থনৈতিক মডেল ছিল না। আশাব্যঞ্জক স্লোগানকে পাশে সরিয়ে রেখে বলতে চাই, একটি উত্তম অর্থনৈতিক মডেল ছাড়া মানুষের নানারকম কার্যক্রমের প্রচেষ্টা এগিয়ে নেয়া যায় না। লিনাক্স এর সেইরকম একটি মডেলের অভাব ছিল বলে মনে হয়েছে। আমরা যৌক্তিকতা প্রয়োগ করে অনুধাবন করলাম, লিনাক্স এর পুরো বিষয়টি ছিল একটি বড় ফ্লুক। এই ফ্লুকটি যথেষ্ট পরিমান ক্যাশ জেনারেট করছিলো, যা আমাদের এবং অন্যান্য আরও অনেক ছোট ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলো, কিন্তু তবুও সেটি একটু ফ্লুকই ছিল।

তারপরেও,আমরা লক্ষ্য করলাম যে এই উদ্ভট লিনাক্স ওএস এর প্রচেষ্টা ধ্বসে যাওয়ার পরিবর্তে উন্নতি অব্যাহত রেখেছে৷ এর ব্যবহারকারী সংখ্যা অব্যাহতরূপে বেড়েই চলছিল এবং তারা সেটিতে যেসব অ্যাপ্লিকেশন দিচ্ছিলো সেসবের পরিশীলতা (সফিস্টেকশন) বৃদ্ধি পাচ্ছিল‌ো।

তাই আমরা আরো যত্ন নিয়ে ওএস এর ডেভেলপমেন্ট স্টাডি করা আরম্ভ করি। আমরা মূখ্য ডেভেলপার এবং বৃহত্তম ব্যবহারকারীদের সাথে কথা বলি। আমরা যতই স্টাডি করছিলাম, তত বেশি এর অস্বাভাবিক, দৃঢ় অর্থনৈতিক মডেল দেখতে পাচ্ছিলাম।

অর্থনৈতিক মডেলটি কার্যকরী ছিল। আরো গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, ইউনিক্স এর আয়ের তুলনায় লিনাক্স এর আয় আমাদের কনভিন্স করতে যথেষ্ট ছিল যে, লিনাক্স একটি বাস্তব প্রযুক্তি যার একটি সত্যিকারের ভবিষ্যত রয়েছে। এই সময়ে (94 এর শরৎকালে) আমরা লিনাক্সের আরও প্রোডাক্ট খুঁজছিলাম যা আমরা CompUSA এবং অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় রিটেইল আউটলেটগুলোতে বিক্রি করতে পারি৷ আর তাই 1995 সালের জানুয়ারিতে, মার্ক ইউইং (Mark Ewing) আর আমি রেড হ্যাট সফটওয়্যার, ইনক প্রতিষ্ঠা করি এবং সেই উদ্ভট অর্থনৈতিক মডেলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরির উদ্দেশ্যে ট্রায়াল এন্ড এরর প্রক্রিয়ায় মনোনিবেশ করি। এতটাই উদ্ভট ছিল যে, এই মডেলটি একটি অসাধারণ অপারেটিং সিস্টেম তৈরী করছিল, আমাদের কাস্টমারদের জন্যে ভ্যালু প্রদান করছিল, এবং আমাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য মুনাফাও অর্জন করেছিল।

রেড হ্যাটে আমাদের ভূমিকা হচ্ছে ইন্টারনেটে সমস্ত ডেভেলপমেন্ট টিমের সাথে, প্রায় চারশো সফটওয়্যার প্যাকেজ নিয়ে কাজ করা, যাতে করে সেগুলিকে একটি উপকারী অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে একত্রিত করা যায়৷ আমরা অনেকটা গাড়ী এসেম্বলিং প্লান্ট এর মত কাজ করি–আমরা ফিনিশড্ প্রডাক্ট পরীক্ষা করে, রেড হ্যাট লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের জন্য সাপোর্ট এবং সেবা প্রদান করি।

আমাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনার “ইউনিক ভ্যালু প্রপোজিশন” ছিল, এবং যা এখনো অব্যাহত রয়েছে; আমাদের গ্রাহকদের অপারেটিং সিস্টেমের উপর নিয়ন্ত্রণ অর্জন করার জন্য তাদের নানান চাহিদা পূরণ করা, যেনো তারা টেকনিক্যাল-ওরিয়েন্টেড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারিদের অবাধে-পুনঃ বিতরণযোগ্য সফ্টওয়্যার (সোর্স কোড এবং ফ্রি লাইসেন্স) এর প্রযুক্তিগত সুবিধা প্রদান করতে পারে।

ফ্রি সফটওয়্যারে আপনি কিভাবে টাকা উপার্জন করবেন?

এই প্রশ্নটি অনুমান করে নেয় যে, প্রোপাইটরি বাইনারি-অনলি সফ্টওয়্যার বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা সহজ, বা অন্তত সহজতর৷

এই একটি ভুল। সফ্টওয়্যারের ব্যবসা, হোক সেটি মুক্ত অথবা প্রোপাইটরি সফ্টওয়্যার, বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়৷ এই কিছুদিন আগ পর্যন্ত সকল সফটওয়্যার ব্যবসাই প্রোপাইটরি বাইনারি-অনলি ছিল, তাই বলা যায় যে আইপি (ইন্টালেকচুয়াল প্রপার্টি) সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং মার্কেটিং মডেলটি, জীবিকা নির্বাহ করার জন্যে বেশ কঠিন। ঠিক যেমনটা ছিল স্বর্ণের সন্ধান করা ১৯ শতকের গোল্ড রাশের সময়কালটি। অনেক সফটওয়্যার কোম্পানী ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হয়, তাই অনেকেই এই “ভাগ্যের চাকা” ঘোরার সুযোগ পেতে, ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকিটি নিয়ে নেয়।

মুক্ত সফটওয়্যারে অর্থ উপার্জন করা সহজ হবে, সেটি কেউই আশা করে না। যদিও মুক্ত সফটওয়্যার ব্যবসায় অর্থ আয় করা একটি চ্যালেঞ্জ, তাই বলে সেটি প্রোপাইটরি সফটওয়্যার ব্যবসার চ্যালেঞ্জ থেকে বড় হবে বিষয়টি তেমন নয়। আসলে মুক্ত সফটওয়্যার আর প্রোপাইটরি সফটওয়্যার ব্যবসায় একই উপায়ে অর্থ উপার্জন করতে হয়; যেমন আপনাকে একটি মারাত্মক প্রডাক্ট তৈরী করতে হবে, দক্ষতা আর সৃজনশীলতা দিয়ে বিপনন করতে হবে, গ্রাহকদের যত্ন নিতে হবে, এবং এসবের দ্বারা এমন একটি ব্রান্ড তৈরী করতে হবে যা গুণে এবং গ্রাহক সেবায় হয়ে উঠবে অনন্য।

অতিরিক্ত প্রতিযোগীতামূলক বাজারে, আপনাকে দক্ষতা আর সৃজনশলীতার মাধ্যমে বিপনন করতে হবে, যেন গ্রাহকদের জন্যে আপনার মত সলিউশন অন্যেরা চাইলেও প্রদান করতে পারবে না কিংবা সমকক্ষও হতে পারবে না। দিনশেষে, ওপেন সোর্স কোন চিন্তার বিষয় নয়, বরং এটি একটি সুযোগ। ওপেন সোর্স ডেভেলপমেন্ট মডেলের মাধ্যমে স্টেবল, ফ্লেক্সিবল, এবং খুব বেশী কাস্টমাইজ করা যায় এমন সফ্টওয়্যার তৈরী করা হয়। আর তাই ওপেন সোর্স সফ্টওয়্যার বিক্রেতারা উন্নত মানের প্রডাক্ট দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। কৌশলটা হচ্ছে আপনার ক্লায়েন্টকে ওপেন সোর্স সফ্টওয়্যারের নানান সুবিধা প্রদান করে অর্থ উপার্জনের কার্যকর উপায় বের করা।

নতুন অর্থনৈতিক মডেল উদ্ভাবন করা মামুলি কাজ নয়, আর রেড হ্যাট যে রাস্তা খুঁজে পেয়েছে, সেটি সবার জন্যে অথবা যেকোন পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়৷ কিন্তু কিছু নীতি বা আদর্শ রয়েছে যা অনেক সফ্টওয়্যার ব্যবসা এবং ওপেন সোর্স উদ্যোগে প্রয়োগ করা উচিত।

অনেক কোম্পানি আংশিকরূপে ওপেন সোর্স পদ্ধতি প্রয়োগের চেষ্টা করে। তারা সাধারণত এমন একটি লাইসেন্স পদ্ধতি গ্রহণ করে, যেটির আওতায় তাদের সফ্টওয়্যারটির বিনামূল্যে বিতরণের অনুমতি থাকে; যদিনা ব্যবহারকারী কোন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সফ্টওয়্যার ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু যদি কেউ যদি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করতে চায়, সেক্ষেত্রে লাইসেন্স ফি বা রয়্যালটি দিতে হবে৷ সফ্টওয়্যার এর সাথে সোর্স কোড এবং মুক্ত লাইসেন্স অন্তর্ভুক্ত থাকলে সেটিকে ওপেন সোর্স হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়–আংশিকরূপে ওপেন সোর্স প্রয়োগকারী কোম্পানিসমূহ সোর্স কোড প্রদান করে ঠিকই, কিন্তু মুক্ত লাইসেন্স ব্যতিরেকে।

মনে রাখবেন, আমরা মুক্ত সফ্টওয়্যার ডেপ্লয়মেন্ট এবং মার্কেট শেয়ার গ্রোথের খুব প্রাথমিক সময়কালে ছিলাম। আপনার প্রডাক্ট থেকে আপনি যদি এখনও পর্যন্ত কোন আয় করতে অসমর্থ হয়ে থাকেন, তাহলে সেটির একমাত্র কারণ আপনার পণ্যের বাজার এখনও ছোট। আমরা লিনাক্সের গ্রোথ নিয়ে সন্তুষ্ট, আনুমানিক 10 মিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছেন আজকের দিনে (1998), আপনাকে মনে রাখতে হবে যে ডস/উইন্ডোজ ব্যবহারকারীর সংখ্যা 230 মিলিয়ন।

আমরা কমোডিটি প্রডাক্টের ব্যবসায় রয়েছি

বেশিরভাগ সফ্টওয়্যার কোম্পানির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হল তাদের সফটওয়্যার আর সোর্স কোডের ইন্টালেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস (অধিকার)৷ কিন্ত বেশিরভাগ সফটওয়্যার কোম্পানির মত রেড হ্যাট আইপির মালিকানার ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে কাজ করে, তাই এটি আমরা বলতে পারি যে রেড হ্যাট সেইরকম কোন সফ্টওয়্যার কোম্পানিদের মত ব্যবসা করছে না। রেড হ্যাট ইন্টালেকচুয়াল প্রোপার্টির ওপর লাইসেন্স আরোপ করে না, যেটির উপর তার মালিকানা রয়েছে। সেটি এমন কোন অর্থনৈতিক মডেল নয় যা আমাদের গ্রাহক, কর্মী এবং শেয়ারহোল্ডারদের সাপোর্ট করবে৷ তাই প্রশ্ন ওঠে: আমরা আসলে কোন ব্যবসায় নিয়োজিত?

সমাধান ছিল অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রির দিকে তাকানো এবং কোনটি আমাদের সাথে মেলে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা। আমরা এমন একটি ইন্ডাস্ট্রি খুঁজছিলাম যেখানে মৌলিক উপাদানসমূহ বিনামূল্যে পাওয়া যায়, অন্তঃত সহজেই পাওয়া যায়। আমরা লিগ্যাল-ইন্ডাস্ট্রি (আইন চর্চা) পরীক্ষা করেছি; আইনি যুক্তি সমূহকে ট্রেডমার্ক বা পেটেন্ট করা যায় না। যদি কোন একজন আইনজীবী সর্বোচ্চ আদালতে একটি মামলা জিতে যান, তাহলে অন্যান্য আইনজীবীরা অনুমতি না নিয়েই সেই যুক্তিগুলো ব্যবহার করতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে, সেই যুক্তিসমূহ তারপর থেকে সর্বজনীন মালিকানায় (বা পাবলিক ডোমেনে) চলে যায়।

আমরা অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি পর্যবেক্ষণ করেছি; বিপুল সংখ্যক সাপ্লায়ার থেকে যন্ত্রাংশ (স্পেয়ার পার্টস) সংগ্রহ করা যায়। আমরা কেউ কিন্তুু গাড়ি চালাই না— আমরা সবাই টয়োটা, মিৎসুবিশি, বিএমডব্লি বা শতাধিক বিকল্প ব্রান্ডাের আর মডেলের গাড়ি চালাই; যেই গাড়ি সেই অটো ইন্ডাস্ট্রি থেকে পাওয়া সমষ্টিগত যন্ত্রাংশ মিলিয়ে তৈরি করা হয়। খুব কম লোকেরই নিজের গাড়ি সংযোজন (এসেম্বলিং) করার প্রয়োজনীয় কারিগরি দক্ষতা রয়েছে। দক্ষতা থাকলেও সময় বা উৎসাহের অভাবে অনেকেই সেটি করা থেকে বিরত থাকেন। অটোমোটিভ খাতের ব্যবসায়িক মডেলে মূল উপার্জনের উৎস হলো গাড়ি সংযোজন এবং পরিষেবা (সার্ভিস) প্রদান।

কমোডিটি খাতের (পণ্য শিল্প) দিকে নজর দেবার পর আমাদের চিন্তায় কিছু নতুন ধারণা আসতে শুরু করেছিল। পেরিয়ে (Perrier) বা এভিয়ান (Evian) এর মতো পানীয় জল, টাইড (Tide) এর মতো সাবানের ব্যবসা, অথবা হাইন্জ (Heinz) এর মতো টমেটো পেস্টের ব্যবসাসহ সকল বিশাল কোম্পানি, যেগুলো পণ্য (কমোডিটি) বিক্রি করে, তাদের বিপণন (মার্কেটিং) কৌশল পরিচালিত হয়, একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড গড়ে তোলার উপর ভিত্তি করে। এই ব্র্যান্ডগুলোকে গুণগত মান (quality), নিরন্তরতা (consistency) এবং নির্ভরযোগ্যতার (reliability) প্রতীক হিসেবে দাঁড়াতে হয়। আমরা এই পণ্যগুলোর (কমোডিটি) ব্র্যান্ড ব্যবস্থাপনায় এমন একটি দিক দেখতে পেয়েছি যা আমরা অনুকরণ করতে পারি বলে মনে করেছি।

কেচাপ তো আসলে ফ্লেভার (স্বাদ) দেয়া টমেটো পেস্টের চেয়ে বেশি কিছু নয়। হাইন্জ কেচাপের মতো দেখতে এবং স্বাদে প্রায় একইরকম কোনকিছু আপনিও আপনার রান্নাঘরেই তৈরি করতে পারবেন, কোনো কপিরাইট নিয়মের ব্যত্যয় না ঘটিয়েই। আসলে এর সকল উপকরণই মুক্তরূপে (মাগনা নয়) প্রাপ্য পুনঃবণ্টনযোগ্য (freely-redistributable) দ্রব্য: টমেটো, সিরকা, লবণ আর মশলা। তাহলে ভোক্তা হিসেবে আমরা রান্নাঘরেই কেচাপ তৈরি করে ফেলিনা কেন, আর হাইন্জ কীভাবে কেচাপের ৮০% বাজার দখল করে আছে?

আমরা কেচাপ তৈরি করি না কারণ হাইন্জ, হান্টস, বা ডেল মন্টে থেকে কেচাপ কেনা তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং অনেক বেশি সুবিধাজনক। কিন্তু সুবিধা (convenience) হল গল্পের শুধুমাত্র একটি অংশ। শুধুমাত্র সুবিধাজনক হওয়ার কারণে বলা যায় যে হাইন্জ, হান্টস এবং ডেল মন্টে কেচাপের বাজার সমানভাবে ভাগ করে নিবে, কারণ তারা প্রায় সমান সুবিধাজনকতা (convenience) প্রদান করে। প্রকৃতপক্ষে, হাইন্জের কেচাপের বাজারে ৮০% শেয়ার দখলে রয়েছে।

হাইন্জ যে ৮০% বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, তার কারণ স্বাদের উৎকর্ষতা নয়। তৃতীয় বিশ্বে গিয়ে যদি আপনি ১০০ জন লোককে খুঁজে বের করেন যারা আগে কখনো কেচাপের স্বাদ চেখে দেখেনি, তাহলে আপনি দুটি বিষয় জানতে পারবেন: একটি হলো যে মানুষগুলো আসলে টমেটো কেচাপ পছন্দ করে না, অন্যটি হলো যে তারা সব ধরনের কেচাপই সমানভাবে অপছন্দ করে।

হাইন্জ কেচাপ বাজারের ৮০% নিয়ন্ত্রণ করে কারণ তারা কেচাপের যে স্বাদ সেটিকে, কেচাপ ভোক্তাদের মনে সংজ্ঞায়িত করতে বা চেনাতে সক্ষম হয়েছে। এখন হাইন্জ কেচাপ ব্র্যান্ডটি এতই কার্যকর যে আমরা ভোক্তা হিসেবে মনে করি যে বোতল থেকে বের হওয়া কেচাপ, চামচ দিয়ে সহজে পাওয়া একদলা কেচাপের চেয়ে ভালো!

এটি ছিল Red Hat-এর সুযোগ: সুবিধা (convenience) প্রদান করা, গুণমান (quality) প্রদান করা, আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, আমাদের গ্রাহকদের মাথায় ঢোকানো যে একটি অপারেটিং সিস্টেম কী হতে পারে। Red Hat-এ, যদি আমরা একটি নিরন্তর (consistently) উচ্চ-মানের (high-quality) পণ্য সরবরাহ (supply) ও সমর্থন (support) করার ক্ষেত্রে ভালো কাজ করতে পারি, তাহলে একটি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করার চমৎকার সুযোগ আমাদের কাছে রয়েছে যা লিনাক্স ওএস গ্রাহকরা সহজেই পছন্দ করবেন।

কিন্তু আমাদের বেশি লিনাক্স ব্যবহারকারী তৈরি করার যে প্রয়োজন (need) এবং সেই লিনাক্স ব্যবহারকারীরা যাতে Red Hat ব্যবহার করে তা নিশ্চিত করার যে প্রয়োজন (need) – এই দুটি প্রয়োজনের (needs) মধ্যে সামঞ্জস্য কিভাবে বজায় থাকবে? আমরা এমন সব ইন্ডাস্ট্রি পরীক্ষা করে দেখেছি যেখানে অংশগ্রহণকারীরা উপকৃত হয় অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের কর্মকাণ্ডের কারণে, তাদের পরিবর্তে বা বিপরীতে নয়।

বেশিরভাগ ইন্ডাস্ট্রিয়াল দেশে পানি পান করতে হলে হাতের সামনে ট্যাপ খুললেই চলে, তাহলে Evian (ইভিয়ান) কীভাবে সেই সকল বাজারে কয়েক মিলিয়ন ডলারের ফরাসি ট্যাপের পানি বিক্রি করে? এটি মূলত একটি বড় অযৌক্তিক ভয় যে আপনার ট্যাপ থেকে বেরুনো পানি বিশ্বাসযোগ্য নয়।

ওই একই কারণে অনেক লোক “অফিসিয়াল” রেড হ্যাট লিনাক্স এর ৫০ ডলারে একটি বাক্স কিনতে চায়, যদিও তারা সেটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করতে পারে বা অফিসিয়াল নয় এমন রেড হ্যাটের CD-ROM কপি কম দামে মাত্র ২ ডলারে কিনতে পারে। ইভিয়ানের (Evian) একটি সুবিধা আছে যে মানবজাতির সকলকে পানি পান করতেই হয়–কিন্তুু আমাদের ব্র্যান্ডটির জন্যে এমন বাজার তৈরি করতে হলে, প্রচুর লিনাক্স ব্যবহারকারী তৈরি করতে হবে।

চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে বাজার তথা মার্কেটের আকারের উপর মনোযোগ প্রদান করা, শুধু মার্কেট শেয়ারের উপর নয়। যখন পানির বোতলের জন্যে ভোক্তার চাহিদা বৃদ্ধি পায়, তখন ইভিয়ান উপকৃত হয়, এমনকি যদি অনেক ভোক্তা ইভিয়ানের বোতল ছাড়া অন্য কোনো ব্রান্ডের বোতলজাত পানি পান করা শুরু করে। ইভিয়ানের মতো, রেড হ্যাট উপকৃত হয় যখন অন্যান্য সরবরাহকারীরা লিনাক্স এর জন্য নতুন কোন টেস্ট (ফিচার বা সুবিধা) তৈরি করার ক্ষেত্রে চমৎকার কাজ করে। মোট লিনাক্স ব্যবহারকারীর সংখ্যা যত বেশি হবে, আমাদের ফ্লেভারের জন্য রেড হ্যাটের সম্ভাব্য গ্রাহকের সংখ্যাও তত বেশি হবে।

ব্র্যান্ডের শক্তি প্রযুক্তি ব্যবসায়ে খুব কার্যকরভাবে প্রতিফলিত হয়। আমাদের কাছে এর প্রমাণ হিসাবে রয়েছে, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকেই সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ওপেন সোর্স সফ্টওয়্যার কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। এ পর্যন্ত সমস্ত বিনিয়োগের মধ্যে একটি সাধারণ মিল হলো যে কোম্পানিসমূহের বা তাদের পণ্যসমূহের ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং গুণগত মান-এর পরিচিতি রয়েছে। অন্য কথায়, তারা সফলভাবে একটি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেছে।

প্রতিষ্ঠানিক কম্পিউটিং সেক্টরে এই মডেলের কৌশলগত গুরুত্ব

ব্র্যান্ড ব্যবস্থাপনার মূল কথা হলো বাজারে নিজের অনন্য স্থান বা পজিশন তৈরি করা। একটি নতুন অপারেটিং সিস্টেম (OS) কে উল্লেখযোগ্য মার্কেট শেয়ার অর্জনের জন্যে যে চ্যালেঞ্জ সমূহের মুখোমুখি হতে হয় তা বিবেচনা করুন। বর্তমান অপারেটিং সিস্টেম (OS) বাজার অত্যন্ত জটিল, এবং একটি ব্রিলিয়ান্ট মার্কেটিং সংস্থার একটি নির্দিষ্ট পণ্যের দ্বারা আধিপত্য বিস্তৃত রয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক সাফল্যের ক্ষেত্রে, একটি পণ্যকে সঠিকভাবে অবস্থান (পজিশনিং) করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লিনাক্স এই ভূমিকাটি স্বাভাবিকভাবে এবং অত্যন্ত চমকৎকারভাবে পালন করে। বাজারের নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অভিযোগ হলো ইন্ডাস্ট্রিতে ঐ বিক্রেতার নিয়ন্ত্রণ। একটি নতুন অপারেটিং সিস্টেম (OS) অবশ্যই এমনভাবে ডিজাইন করা হবে যাতে এটি এর ব্যবহারকারীকে OS প্ল্যাটফর্মের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে, আর কেবলমাত্র আরেকটি মালিকানাধীন (প্রোপাইটরি) বাইনারি-অনলি OS হিসেবে পরিণত না হয়, যার মালিক সেই একই আধিপত্য বিস্তারবাদি মার্কেট পজিশন দখল করবে, যা নিয়ে ভোক্তারা আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছেন।

বিবেচনা করুন যে লিনাক্স আসলে একটি অপারেটিং সিস্টেম (OS) নয়। এটি একটি সামগ্রিক ওপেন-সোর্স উপাদানের সংগ্রহকে বর্ণনা করতে এসেছে, ঠিক যেমন “গাড়ি” শব্দটি হাইওয়েতে চালিত বস্তুটির চেয়ে আরো বেশি করে একটি শিল্পকে বর্ণনা করে। আমরা গাড়ি চালাই না–আমরা চালাই ফোর্ড টরাস বা হোন্ডা অ্যাকর্ড। রেড হ্যাট হচ্ছে ফ্রি সফটওয়্যার অপারেটিং সিস্টেম শিল্পের একটি অপারেটিং সিস্টেম অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্টের সমতুল্য। রেড হ্যাটের তখনই সফল হয়, যখন গ্রাহকদের মধ্যে আমাদের ব্র্যান্ডের পর্তি তাদের পছন্দের বিকাশ ঘটে, যেখানে তারা রেড হ্যাটকে একটি অপারেটিং সিস্টেম বা লিনাক্স ডিস্টিবিউটর এর পরিবর্তে একটি পছন্দনীয় সংস্থা হিসেবে দেখে।

হোন্ডা মিচেলিন থেকে টায়ার, টিআরডব্লিউ (TRW) থেকে এয়ারব্যাগ, এবং ডুপন্ট (Dupont) থেকে পেইন্ট ক্রয় করে এবং এই বৈচিত্র্যময় উপাদানগুলিকে একত্রিত করে একটি অ্যাকর্ড (Accord) তৈরি করে যা সার্টিফিকেশন, ওয়ারেন্টি, এবং হোন্ডার নিজস্ব ও স্বাধীন মেরামতের দোকানের একটি নেটওয়ার্ক সেবাসহ প্রদান করা হয়।

রেড হ্যাট সিগনাস (Cygnus) থেকে কম্পাইলার, অ্যাপাচি (Apache) থেকে ওয়েব সার্ভার, এবং এক্স কনসোর্টিয়াম (যারা Digital, HP, IBM, Sun, এবং অন্যদের সাপোর্ট নিয়ে এটি তৈরি করেছে) থেকে এক্স উইন্ডো (X Window) সিস্টেম সংগ্রহ করেছে এবং এই উপাদান সমূহ একত্রিত করে একটি সার্টিফাইযোগ্য, ওয়ারেন্টিযুক্ত, এবং এওয়ার্ড-উইনিং Red Hat লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করে।

অটোমোবাইল শিল্পের মতোই, রেড হ্যাটের দায়িত্ব হলো উপলভ্য ওপেন-সোর্স উপাদান সমূহের সেরা জিনিসগুলো নির্বাচন করে সর্বোত্তম অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা। কিন্তু অপারেটিং সিস্টেমের উপর নিয়ন্ত্রণ রেড হ্যাট বা অন্য কারো কাছে নেই। যদি রেড হ্যাটের কোনো গ্রাহক আমাদের Sendmail সিলেকশন সিদ্ধান্তের সাথে একমত না হন এবং Qmail বা অন্য কোনো সলুশন ব্যবহার করতে চান, তাহলে তাদের সেই নিয়ন্ত্রণ রেয়েছে যাতে করে সেটি তারা চাইলেই করতে পারেন। অনেকটা এমন, যদি কেউ যদি ফোর্ড টরাস ক্রয় করার পর গাড়ির সাথে আসা ইঞ্জিনের পরিবর্তে উচ্চ কর্মক্ষমতার ম্যানিফোল্ড (manifold) ইনস্টল করতে চায়, তাহলে তারা সেটি করার স্বাধীনতা রাখে। কারণ টরাসের মালিক গাড়ির বনেট (হুড) খুলে ফেলতে পারেন, তাই তাদের গাড়ির উপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। অনুরূপভাবে, রেড হ্যাট ব্যবহারকারীরা তারা যে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমটি ব্যবহার করেন, তার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখেন, কারণ তাদের লাইসেন্স রয়েছে সোর্স কোডটি খুলে পরিবর্তন করার জন্য।

একচেটিয়া বাজারের (মনোপলি) সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য মনোপলিস্টের নিয়ম মেনে চলে খেলা যায় না। একচেটিয়া বাজারের (মনোপলি) কাছে রিসোর্স, ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল, গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) রিসোর্স রয়েছে; সংক্ষেপে বলতে গেলে, তাদের কাছে অনেক বেশি শক্তি রয়েছে। একচেটিয়া বাজারের (মনোপলি) সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য আপনাকে খেলার নিয়মগুলিকে এমনভাবে পরিবর্তন করতে হবে যেন সেটি আপনার শক্তির পক্ষে যায়।

১৯শ শতকের শেষের দিকে, বিগ আমেরিকান মনোপলির (কনসার্ন) উদ্যেগের বিষয় অপারেটিং সিস্টেম ছিল না, বরংসেটি ছিল রেলপথ বিষয়ক। প্রধান (major) রেলপথগুলো প্রধান শহরগুলোর (major cities) মধ্যে পরিবহনের উপর কার্যকর একচেটিয়া (মনোপলি) ধরে রেখেছিল। প্রকৃতপক্ষে, শিকাগোর মতো প্রধান (major) আমেরিকান শহরগুলো রেলপথ কোম্পানির মালিকানাধীন সেন্ট্রাল রেলওয়ে টার্মিনাল সমূহের আশেপাশেই গড়ে উঠেছিল।

এই একচেটিয়া (মনোপলি) নতুন রেলপথ নির্মাণ করে এবং কয়েক ডলার কম চার্জ করেও পরাস্ত করা যায়নি। তারা পরাস্ত হয়েছিল আন্তঃরাজ্য মহাসড়ক ব্যবস্থা (ইন্টারস্টেট হাইওয়ে সিস্টেম) নির্মাণ এবং ট্রাকিং কোম্পানি দ্বারা গ্রাহকের দরজায় ডেলিভারির সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে, যা ছিল রেলপথ মডেলের সীমিত আকারে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ডেলিভারি ব্যবস্থার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী।

বর্তমানে, বিদ্যমান মালিকানাধীন (প্রপ্রাইটরি) অপারেটিং সিস্টেমগুলোর মালিকেরা এমন একটি প্রযুক্তির মালিক যা রেলওয়ে সিস্টেমের মালিকানার মতোই। একটি মালিকানাধীন (প্রপ্রাইটরি) অপারেটিং সিস্টেমের এপিআই (API) হচ্ছে একটি রেলপথের রুট এবং সময়সূচির মতোই। সাদৃশ্যের ব্যাখ্যা: রুট (Routes) ≈ API ইন্টারফেস: যেমন রেলপথের রুটগুলো ট্রেনকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেয়, একইভাবে API ইন্টারফেসগুলো সফ্টওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে অপারেটিং সিস্টেমের নির্দিষ্ট কার্যকারিতা বা সেবাগুলোতে অ্যাক্সেস পেতে দেয়। সময়সূচি (Timetables) ≈ API কল এবং রেসপন্স: যেমন রেলপথের সময়সূচি ট্রেনের চলাচলের সময় নির্ধারণ করে, একইভাবে API কল এবং রেসপন্সগুলো সফ্টওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন এবং অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে যোগাযোগের ধারাবাহিকতা (ক্রম) এবং সময়কাল নির্ধারণ করে। অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) বিক্রেতারা যে কোনো টোল (মূল্য/খরচ) নির্ধারণ করে চার্জ করতে পারে। রূপকার্থক ব্যাখ্যা: টোল (Toll): এখানে টোল বলতে অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের জন্য নেওয়া মূল্য, লাইসেন্স ফি, বা অন্যান্য খরচকে বোঝানো হয়েছে। যেমন একটি রেলপথ বা সেতু ব্যবহার করার জন্য টোল দিতে হয়, একইভাবে অপারেটিং সিস্টেম বিক্রেতারা তাদের পণ্য/সেবা ব্যবহারের জন্য টোল (মূল্য) নির্ধারণ করে নিতে পারে। তদুপরি তারা অপারেটিং সিস্টেমের মধ্য দিয়ে এপিআই যে “রুট” (পথ) নেয় তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং পরিবর্তনও করতে পারে, যাতে তাদের বিক্রয় করা অ্যাপ্লিকেশনগুলো সহজে নিজস্ব চাহিদা পূরণ করতে, যেটি তাদের প্রতিযোগীদের বিক্রয় করা অ্যাপ্লিকেশনের চাহিদার জন্যে উপলভ্য নয়, তারা সেই প্রতিযোগীদের আ্যাপলিকশনের প্রতি উদাসীন। বিশ্লেষণ: রুট (Route) নিয়ন্ত্রণ: এপিআইগুলোর যোগাযোগ পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করা, যা অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদানকে প্রভাবিত করে। স্বার্থসিদ্ধ পরিবর্তন: অপারেটিং সিস্টেম বিক্রেতারা তাদের নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশনের সুবিধার্থে এপিআই রুট পরিবর্তন করতে পারে, যা প্রতিযোগীদের অ্যাপ্লিকেশনগুলোর জন্য বাধাসম্পন্ন হতে পারে। প্রতিযোগিতামূলক অসুবিধা: এই ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিযোগীদের জন্য অসুবিধার কারণ হতে পারে, কারণ তাদের অ্যাপ্লিকেশনগুলো অপারেটিং সিস্টেমের সাথে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এই অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) বিক্রেতাদের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা হলো যে তারা সোর্স কোডে অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ করে, যেখানে তাদের নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন সহজে চলে এবং স্বাধীন সফ্টওয়্যার ভেন্ডর (ISV) এর অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে বন্ধুর পথে চলতে বাধ্য হতে হয়। বিশ্লেষণ: সোর্স কোড নিয়ন্ত্রণ: ওএস বিক্রেতারা যেহেতু সোর্স কোডের মালিক, তাই তারা এই কোডটি কিভাবে ব্যবহার করা হবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ISV (স্বাধীন সফ্টওয়্যার ভেন্ডর) এর উপর নির্ভরতা: ISV এর অ্যাপ্লিকেশনগুলো ওএস বিক্রেতাদের অপারেটিং সিস্টেমের উপর নির্ভরশীল, যা ওএস বিক্রেতাদের একটি শক্তিশালী অবস্থান (advantage) প্রদান করে। প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা: সোর্স কোড নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে, ওএস বিক্রেতারা তাদের নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে অন্যদের তুলনায় আরও সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে আসতে পারে, যা তাদের একটি অনেক বেশী প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা প্রদান করে।

এই মডেলের সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে, স্বাধীন সফ্টওয়্যার ভেন্ডরদের (ISV) প্রয়োজন এমন একটি অপারেটিং সিস্টেম (লিনাক্স) মডেল যেখানে; অপারেটিং সিস্টেমের বিক্রেতা অপারেটিং সিস্টেমটি নিয়ন্ত্রণ করবে না; অপারেটিং সিস্টেমের সরবরাহকারী শুধুমাত্র অপারেটিং সিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণের দায়ীত্বে থাকবে; এবং স্বাধীন সফ্টওয়্যার ভেন্ডর (ISV) নিশ্চিতরূপে তার অ্যাপ্লিকেশন বিক্রি করতে পারবে এই বিশ্বাস রেখে যে অপারেটিং সিস্টেমের বিক্রেতা তার সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতামূলক হুমকি নয়। অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) মডেলের এই আকর্ষণ সফ্টওয়্যার জগতে ধীরে ধীরে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করতে শুরু করেছে। ব্যাখ্যা: আকর্ষণ: এই অপারেটিং সিস্টেম মডেল সফ্টওয়্যার ডেভেলপার এবং ব্যবহারকারীদের সুবিধা এবং স্বাধীনতা প্রদান করে। সফ্টওয়্যার জগতে গ্রহণযোগ্যতা: লিনাক্স এবং ওপেন-সোর্স সফ্টওয়্যারের বর্ধিত জনপ্রিয়তা, সফ্টওয়্যার কোম্পানিগুলোর মধ্যে, এবং ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্বাধীনতা এবং বিকল্পের চাহিদা এই মডেলের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করেছে। কোরেলের ওয়ার্ডপারফেক্টকে লিনাক্সে পোর্ট করার, ওরাকলের তাদের ডাটাবেজ সফ্টওয়্যারকে লিনাক্সে পোর্ট করার, এবং আইবিএম-এর অ্যাপাচি সাপোর্ট করার পিছনের যুক্তির এটি অন্যতম অংশ।

মালিকানাধীন (প্রপ্রাইটরি) বাইনারি-শুধুমাত্র অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় একটি ওপেন-সোর্স অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) যে সুবিধা তা হলো ব্যবহারকারীরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন তার উপর তার নিয়ন্ত্রণ লাভ করা। ওপেন-সোর্স ওএস এর সুবিধাগুলো: নিয়ন্ত্রণ: ব্যবহারকারীরা সোর্স কোড অ্যাক্সেস করতে পারে, পরিবর্তন করতে পারে, এবং তাদের নিজস্ব চাহিদা অনুযায়ী অপারেটিং সিস্টেমটিকে কাস্টমাইজ করতে পারে। স্বাধীনতা: ব্যবহারকারীরা কোনো একচেটিয়া সফ্টওয়্যার বিক্রেতার উপর নির্ভরশীল নয়, যার ফলে তারা আরও স্বাধীনভাবে তাদের পছন্দের সফ্টওয়্যার বেছে নিতে পারে। সম্প্রদায়ের সমর্থন (কমিউনিটি সাপোর্ট): ওপেন-সোর্স অপারেটিং সিস্টেমগুলো প্রায়ই বিস্তৃত সম্প্রদায়ের দ্বারা সমর্থিত হয়, যা নতুন বৈশিষ্ট্য, নিরাপত্তা আপডেট, এবং সাপোর্ট প্রদান করে। মালিকানাধীন (প্রপ্রাইটরি) অপারেটিং সিস্টেম বিক্রেতারা, যারা তাদের পণ্যে অন্তর্ভুক্ত মালিকানাধীন সফ্টওয়্যারে বিপুল বিনিয়োগ করেছে, তারা যদি আমরা যে সুবিধা গ্রাহকদের প্রদান করছি সেটি অনুসরণ করার চেষ্টা করে, তাহলে তারা পাগলামি করবে; কারণ আমরা প্রতিজন ব্যবহারকারী হতে অনেক রেভেনিউ জেনারেট (আয়) করি।

অবশ্যই, যদি আমাদের প্রযুক্তি মডেলটি কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের একটি যথেষ্ট বড় গ্রুপের দ্বারা গৃহীত হয়, তাহলে বিদ্যমান অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) বিক্রেতারা কোন না কোন একটি উপায়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে। কিন্তু সেটি এখনও ভবিষ্যতের বিষয়, আরও কয়েক বছর দূরে। যদি তারা প্রতিক্রিয়া হিসেবে নেটস্কেপের মতো তাদের কোড “মুক্ত” করে দেয় (যেমনটি নেটস্কেপ তাদের নেভিগেটর ব্রাউজারের কোড মুক্ত করেছিল), তাহলে এর ফলে নাটকীয়ভাবে কম খরচে আরও ভালো পণ্য তৈরি হবে। যদি আমাদের প্রচেষ্টার একমাত্র ফলাফল হিসেবে এটি ঘটে যায়, তাহলে ইন্ডাস্ট্রীই ব্যাপক পরিসরে উত্তমরূপে উপকৃত হবে। অবশ্যই, সেখানেই থেমে থাকা রেড হ্যাটের লক্ষ্য নয়।

লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের “নিয়ন্ত্রণ” সুবিধার গুরুত্ব বোঝানোর জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে ফার্মিল্যাবের (Fermilab – Fermi National Accelerator Laboratory) অভিজ্ঞতা লক্ষ্যণীয়, যা খুবই আকর্ষণীয়। ফার্মিল্যাব হলো শিকাগোর বাইরে অবস্থিত একটি বৃহৎ কণা ত্বরক (big particle accelerator) গবেষণা প্রযুক্তি ল্যাবোরেটরি। তারা এক হাজারেরও বেশি হাই-লেভেল ফিজিক্স (উচ্চ-স্তররে পদার্থবিদ্যা) প্রকৌশলী নিয়োগ করেছে, যারা সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের কাজকর্মের চাহিদা অনুযায়ী কাস্টমাইজ করার সুবিধা পেয়ে থাকেন। লিনাক্সের সুবিধার একটি উদাহরণ হলো এর ক্লাস্টার ফার্মস (cluster farms) ব্যবহার করার ক্ষমতা, যা ম্যাসিভ প্যারালাল সুপার কম্পিউটার তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। ফার্মিল্যাবের এই বৈশিষ্ট্যটির প্রয়োজন, কারণ তারা তাদের একসিলারেটরের (ত্বরকের) কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করছিলো। এই কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির ফলস্বরূপ, তারা আশা করছে যে প্রতি সেকেন্ডে আগের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি ডেটা বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হবে। তাদের বাজেটে বিদ্যমান সুপার-কম্পিউটার সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ক্রয় করে প্রয়োজনীয় কম্পিউটিং ক্ষমতা অর্জন করা সক্ষম হবে না।

এইটি এবং আরো অন্যান্য কারণেই ফার্মিল্যাব ওপেন সোর্স এর সমাধান খুঁজছিল। তারা স্বীকৃতি দিয়েছিল যে রেড হ্যাট লিনাক্স ছিল ওপেন সোর্সের অন্যতম জনপ্রিয় পছন্দের একটি, তাই তারা আমাদেরকে (রেড হ্যাটকে) ফোন করেছিল। আসলে, প্রকল্পের সিস্টেম নির্বাচন পর্যায়ের চার মাসের মধ্যে তারা আমাদেরকে (রেড হ্যাটকে) ছয়বার ফোন করেছিল, এবং আমরা তাদের কোনো ইনকোয়ারিতে একবারও প্রতিক্রিয়া জানাইনি। তথাপি, তাদের স্টাডির ফলাফল ছিল ফার্মিল্যাবে সরকারিভাবে সাপোর্টেড অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে রেড হ্যাট লিনাক্সকে নির্বাচন করা। এখানে শিক্ষণীয় বিষয়টি হলো যে (ক) আমাদের আরও ভালোভাবে ফোনগুলি উত্তর দেওয়া শিখতে হবে (আমরা ইতিমধ্যেই শিখেছি), এবং (খ) যে ফার্মিল্যাব অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিল যে আমাদের ব্যবসায়িক মডেল তাদেরকে রেড হ্যাট লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রদান করবে, রেড হ্যাট সফটওয়্যার, ইনক. তাদের সাপোর্ট করার মত অবস্থানে ছিলে কি ছিলনা, সেটা ধর্তব্য হয়নি।

সুতরাং, বড় কম্পিউটার ব্যবহারকারী সংস্থাগুলি হোক অথবা বড় কম্পিউটার প্রযুক্তি সরবরাহকারীরা (ISVs) হোক, লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমটি সুবিধা প্রদান করে এবং যা সমস্ত মালিকানাধীন (প্রোপাইটরি) বাইনারি-অনলি অপারেটিং সিস্টেমের প্রধান সীমাবদ্ধতাসমূহ (major limitations) থেকে মুক্ত। লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন সমূহের মধ্যে রেড হ্যাট লিনাক্সের সতর্ক ব্র্যান্ড ব্যবস্থাপনা, এবং অপারেটিং সিস্টেমের বিকল্প সমূহের মধ্যে লিনাক্সের সাবধানি বাজার অবস্থান (মার্কেট পজিশনিং), রেড হ্যাটকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যায়, যার কারণে আমরা আজকের গ্রোথ ও সাফল্য উপভোগ করছি।

লাইসেন্সিং, ওপেন সোর্স, বা ফ্রি সফটওয়্যার

লিনাক্স ব্যবহারের সুবিধা এর উচ্চ নির্ভরযোগ্যতা, ব্যবহারের সহজতা, দৃঢ়তা, বা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের সাথে অন্তর্ভুক্ত টুলসে নিহিত নয়। এটি নিয়ন্ত্রণের সুবিধা, যা এই অপারেটিং সিস্টেমের দুটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের ফলাফল; সেই দুইটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি সম্পূর্ণ সোর্স কোড সহ ডেলিভারি করা হয়, এবং আপনি এই সোর্স কোড আপনার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো কিছুর জন্য ব্যবহার করতে পারেন—আমাদের অনুমতি চাওয়ার প্রয়োজন ছাড়াই।

নাসা, যে প্রতিষ্ঠানটির কাজ হচ্ছে মানুষকে রকেটে পুরে মহাকাশে পাঠানো, তাদের একটি অভিব্যক্তি আছে: “সোর্স কোড ছাড়া সফটওয়্যার কোন সফটওয়্যারই নয়।”

নাসার প্রকৌশলীদের কাছে, শুধুমাত্র উচ্চ নির্ভরযোগ্যতাই যথেষ্ট নয়। অত্যন্ত উচ্চ নির্ভরযোগ্যতাও যথেষ্ট নয়। নাসার প্রয়োজন নিখুঁত নির্ভরযোগ্যতা (perfect reliability)। যেখানে বারোটি প্রান নাসার উপর আস্থা রেখে প্রতি ঘণ্টায় হাজার মাইল বেগে পৃথিবীর চারদিকে রকেটে চেপে প্রদক্ষিণ করছে, এমন সময়ে নাসা “ব্লু স্ক্রীন অফ ডেথ” (সিস্টেম ক্র্যাশ) এর ঝুঁকি নিতে পারে না, কারণ তাদের জীবন রক্ষার জন্য সিস্টেমের উপর নির্ভর করতে হয়।

নাসার প্রয়োজন এই সিস্টেম তৈরি করতে ব্যবহৃত সফটওয়্যারের সোর্স কোডে অ্যাক্সেস, যাতে তারা সেগুলির নির্ভরযোগ্যতা, নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে পারে। এবং তাদের প্রয়োজন এমন একটি লাইসেন্স সহ সফটওয়্যার, যেই লাইসেন্সটি তাদের চাহিদা পূরণের জন্য সোর্স কোড সংশোধন করার অনুমতি দেয়। আমি স্বীকার করি যে কোন ডেন্টাল অফিসের রোগীদের বার্ষিক দাঁত পরিষ্কারের খরচ হিসাব করার বিলিং সিস্টেমের এমন নির্ভরযোগ্যতার মানদণ্ডের প্রয়োজন নেই; যা নাসার মহাকাশচারীদের প্রয়োজন, কিন্তু উভয় ক্ষেত্রে নীতি একই থাকবে।

লিনাক্সে আমাদের ব্যবহারকারীরা তারা যে অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরি করছেন তার চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের প্রডাক্ট সংশোধন করার ক্ষমতা রাখেন, যা মালিকানাধীন (প্রোপাইটরি) বাইনারি-অনলি অপারেটিং সিস্টেমের অসম্ভব। এটিই হলো ইউনিক ভ্যালু প্রোপজিশন যা রেড হ্যাট গ্রাহকদের প্রদান করে। এটিই হলো সেই প্রোপজিশন যা আমাদের অনেক বড় প্রতিযোগীদের মধ্যে কেউই দিতে ইচ্ছুক নন বা সক্ষম নন।

এটি এমন একটি ভ্যালু প্রোপজিশন যা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির (ইন্টালেকচুয়াল প্রপার্টির) সাধারণ ধারণার বিপরীতে যায়। গ্রাহকদের আটকে রাখতে এবং সোর্স কোড থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য লাইসেন্স ব্যবহার করার পরিবর্তে, রেড হ্যাটের প্রয়োজন এমন একটি লাইসেন্স যা সোর্স কোডে অ্যাক্সেস এবং নিয়ন্ত্রণের ধারণাকে নিজেই ধারণ করে। তাহলে এই ইউনিক ভ্যালু প্রোপজিশনন প্রদানের উদ্দেশ্যে একটি গ্রহণযোগ্য লাইসেন্স কী হতে পারে? ওপেন সোর্স কমিউননিটির মধ্যে যৌক্তিক ব্যক্তিরা এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে মতপার্থক্য করতে পারেন এবং করেনও। কিন্তু রেড হ্যাটে, বর্তমানে এই বিষয়ে আমাদের নিজস্ব মতামত রয়েছে এবং সেগুলো নিচে দেওয়া হলো:

ফ্রি সফটওয়্যার ফাউন্ডেশনের জেনারেল পাবলিক লাইসেন্সটি ওপেন সোর্সের চেতনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, এবং এটি নিশ্চিত করে যে অপারেটিং সিস্টেমে কৃত সংশোধন (modification) ও উন্নয়নসমূহ (imporovements) সর্বজনীনভাবে অ্যাক্সেসযোগ্য থাকবে, যেনো তা একটি সহযোগিতামূলক উন্নয়ন প্রকল্প (cooperative development project) পরিচালনার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী (effective) হয়।

“কার্যকর” (effective) শব্দের আমাদের সংজ্ঞা, পুরোনো ইউনিক্স ডেভেলপমেন্টের দিনগুলি থেকে চলে এসেছে। ১৯৮৪ সালের আগে, এটি অ্যান্ড টি (AT&T) ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেমের সোর্স কোড যেকোনো টিমের সাথে শেয়ার করত, যারা সেটি উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। যখন এটি অ্যান্ড টি (AT&T) ভেঙে দেয়া হলো, তার ফলে AT&T শুধুমাত্র একটি টেলিফোন কোম্পানি হিসেবে থেকে যাওয়ার বিধিনিষেধ থেকে মুক্ত হয়ে গিয়েছিল। এটি ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেমের লাইসেন্স বিক্রি করে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সকল বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা গোষ্ঠী যারা একদা ইউনিক্স তৈরিতে সাহায্য করেছিল, তারা হঠাৎ করে নিজেদেরকে এমন একটি অপারেটিং সিস্টেমের লাইসেন্সের জন্য অর্থ প্রদান করার সম্মুখীন হলো, যেটি নির্মাণে তারা নিজেরাই অবদান রেখেছিল। তারা খুশি ছিলেন না, কিন্তু এই বিষয়ে তারা খুব বেশি কিছু করতে পারেননি—কারণ, এটি অ্যান্ড টি (AT&T) ইউনিক্সের কপিরাইটের মালিক ছিল। অন্যান্য ডেভ টিমগুলো এটিঅ্যান্ডটি (AT&T) এর সুবিবেচনাপ্রসূত এটিঅ্যান্ডটি (AT&T) কে সহায়তা করেছিল।

আমাদের চিন্তাটিও একই। যদি রেড হ্যাট নতুন কিছু উদ্ভাবন করে, যা আমাদের প্রতিযোগীরা ব্যবহার করতে পারবে, তাহলে আমরা কমপক্ষে যেটি দাবি করতে পারি তা হলো, আমাদের প্রতিযোগীরা সেকল ডেভেলপমেন্ট করবে, সেগুলি যেন আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং দলের জন্যও উপলভ্য থাকে। এবং জিপিএল (GPL) হলো সবচেয়ে কার্যকর সেই লাইসেন্সটি যা নিশ্চিত করে যে, বিভিন্ন দলের সদস্যদের মধ্যে সেই সময়ের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নির্বিশেষে এই বাধ্যতামূলক সহযোগিতা(cooperation) চলতে থাকবে।

মনে রাখবেন যে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের একটি বড় শক্তি হলো, এটি একটি অত্যন্ত মডুলার প্রযুক্তি। যখন আমরা রেড হ্যাট লিনাক্সের একটি সংস্করণ শিপ করি, আদতে আমাদের প্রায় ৪৩৫টি আলাদা আলাদা প্যাকেজ শিপিং করতে হয়ে। সুতরাং, লাইসেন্সিংয়েরও একটি ব্যবহারিক মাত্রা রয়েছে। একপ্রকার লাইসেন্স রয়েছে যেটি রেড হ্যাটকে তার সফটওয়্যার বিতরণ করতে দেয় কিন্তু এতে পরিবর্তন করতে দেয় না, এতে সমস্যা সৃষ্টি করে কারণ ব্যবহারকারীরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী সফটওয়্যারটিকে সংশোধন বা পরিবর্তন করতে পারে না। আরেকপ্রকার কম সীমাবদ্ধ লাইসেন্স যা পরিবর্তন করার আগে মূল লেখকের অনুমতি চাওয়ার প্রয়োজনীয়তা শর্ত রাখে, তবে সেটিও রেড হ্যাট এবং আমাদের ব্যবহারকারীদের উপর খুব বেশি সীমাবদ্ধতা চাপিয়ে দেয়ার সামিল। যদি এমন হয় যে 435 জন ভিন্ন কোডার বা ডেভ টিমের কাছে অনুমতি চাইতে হবে সামান্য কোন পরিবর্তন করার জন্য, সেটি নিশ্চয় বাস্তবিক হবে না।

কিন্তু আমরা লাইসেন্স নিয়ে মতাদর্শিক নই। আমরা যেকোনো লাইসেন্সের সাথে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, এমন লাইসেন্স যেটি আমরা যে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করছি তার উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে, কারণ এর ফলে আমরা আমাদের গ্রাহক ও ব্যবহারকারীদেরকেও সেই একই নিয়ন্ত্রণের সুবিধা প্রদান করতে পারি, হোক তারা নাসা প্রকৌশলী বা একটি ডেন্টাল অফিস বিলিং সিস্টেমে কাজ করা অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামার।

অর্থনৈতিক ইঞ্জিন

ওপেন সোর্স সফটওয়্যার উন্নয়নের নেপথ্যে

লিনাক্স কোথা থেকে আসলো সেই আকর্ষণীয় গল্পসমগ্র এই অপারেটিং সিস্টেমের উন্নয়নকে চালিত করে যা এমন শক্তিশালী অর্থনৈতিক মডেলটিকে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে সাহায্য করে।

ওপেন সোর্স সম্প্রদায়কে অবশ্যই শখের হ্যাকারের স্টেরিওটাইপকে পরাস্ত করতেই হতো। বিশ্লেষণ: প্রাথমিকভাবে, ওপেন সোর্স সফটওয়্যার উন্নয়নকে শখের প্রজেক্ট বা হ্যাকারদের কাজ হিসাবে দেখা হতো। এই ধারণাটি বোঝায় যে ওপেন সোর্স সফটওয়্যারগুলি অপেশাদার বা নির্ভরযোগ্য নয়। বড় বড় কোম্পানিগুলি ওপেন সোর্স প্রজেক্টে পেশাদার ডেভেলপারদের নিয়োগ করেছে, যা ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের গুণমান এবং নির্ভরযোগ্যতা উন্নত করেছে। ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে, যা তাদের বৈধতা এবং ভ্যালু প্রদর্শন করে। ওপেন সোর্স সফটওয়্যার এখন ইন্ডাস্ট্রীতে স্বীকৃত, এবং অনেক কোম্পানি তাদের পণ্য এবং পরিষেবার জন্য ওপেন সোর্সের উপর নির্ভর করে। এই স্টেরিওটাইপ অনুসারে, উদাহরণ দেয়া হয়, লিনাক্স চৌদ্দ বছর বয়সী হ্যাকাররা তাদের বেডরুমে তৈরি করেছে। আমরা এখানে একটি উদাহরণ দেখতে পাচ্ছি ভয়, অনিশ্চয়তা, এবং সন্দেহ (ফিয়ার, আনসার্টেন্টি, অ্যান্ড ডাউট – FUD) যা মালিকানাধীন (প্রোপাইটরি) সিস্টেমের বিক্রেতারা সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির উপর চাপিয়ে দেয়। FUD এর বিশ্লেষণ এবং প্রভাব: FUD এর উদ্দেশ্য:** + **প্রতিযোগিতা দমন:** মালিকানাধীন সফটওয়্যার বিক্রেতারা প্রায়ই FUD ব্যবহার করে ওপেন সোর্স বা প্রতিযোগী সফটওয়্যারকে কম আকর্ষণীয় বা বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে। * **FUD এর উপাদানগুলি:** + **ভয় (Fear):** নির্দিষ্ট পরিণতির (যেমন, নিরাপত্তা লঙ্ঘন) ভয় দেখানো। + **অনিশ্চয়তা (Uncertainty):** অস্পষ্টতা বা ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা তৈরি করা। + **সন্দেহ (Doubt):** প্রতিযোগী সফটওয়্যারের কার্যকারিতা, স্থায়িত্ব, বা সমর্থনের বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করা। * **FUD এর প্রভাব:** + **গ্রাহকদের উপর প্রভাব:** FUD গ্রাহকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিভ্রান্ত করতে পারে, তাদেরকে আরও পরিচিত বা প্রতিষ্ঠিত মালিকানাধীন সফটওয়্যারের দিকে নিয়ে যেতে পারে। + **শিল্পের উপর প্রভাব:** FUD ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের গ্রহণযোগ্যতা এবং বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, যা সম্ভাব্যভাবে সফটওয়্যার উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনকে প্রভাবিত করে। আসলে কে আছে এমন যে তাদের মিশন-ক্রিটিক্যাল এন্টারপ্রাইজ অ্যাপ্লিকেশন সমূহের জন্যে কোন চৌদ্দ বছর বয়সী কিশোরের অবসর সময়ে লেখা সফ্টওয়্যারের উপর আস্থা রাখবে? FUD এর একটি উদাহরণ: এই বক্তব্যটি ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের প্রতি একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করার চেষ্টা করে, বিশেষ করে এন্টারপ্রাইজ সেটিংসে। এই বক্তব্যটি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা হয় যে ওপেন সোর্স সফটওয়্যার শুধুমাত্র শখের বিষয় বা অপেশাদারদের দ্বারা তৈরি করা হয়, যা সত্য নয়। অনেক ওপেন সোর্স সফটওয়্যারে পেশাদার ডেভেলপার, কোম্পানি, এবং সংস্থাগুলি অবদান রাখে। ওপেন সোর্স সফটওয়্যার এন্টারপ্রাইজ, শিক্ষা, এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ওপেন সোর্স সফটওয়্যারসমূহ প্রায়ই বিস্তৃত কমিউনিটি দ্বারা পরীক্ষা করা হয়, যা তাদের গুণমান এবং নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করে।

বাস্তবতা, অবশ্যই, এই স্টেরিওটাইপ থেকে খুবই আলাদা। যদিও একাকী হ্যাকার (lone hacker) ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়ার এক মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এরূপ প্রোগ্রামাররা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম কোডের খুব সামান্য অংশ ডেভেলপ করে। একাকী হ্যাকার/অবদানকারী: ব্যক্তিগত অবদানকারীরা যারা তাদের স্বেচ্ছাশ্রম এবং দক্ষতা দিয়ে লিনাক্সের ডেভেলপমেন্টে সাহায্য করেন। পেশাদার ডেভেলপার: যারা পূর্ণ-সময়ের ভিত্তিতে লিনাক্সের উন্নয়নে কাজ করেন, বেশীরভাগ সময় কোন কোম্পানি তাদের নিয়োগ প্রদান করে। কোম্পানি এবং প্রতিষ্ঠান: যেমন রেড হ্যাট, ইন্টেল, গুগল, এবং অন্যান্য যারা লিনাক্সের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। লিনাক্স কোডবেসের ডেভেলপমেন্টে: লিনাক্স কোডবেস ডেভেলপমেন্ট জন্য ব্যক্তি এবং সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলাফল। লিনাক্সের স্রষ্টা, লিনুস টরভাল্ডস ছাত্রাবস্থায় লিনাক্স ডেভেলপ করা শুরু করেছিলেন, তবে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের কোডের বড় অংশটি বৃহদ সফটওয়্যার প্রকৌশল কোম্পানি, এবং অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের পেশাদার সফটওয়্যার ডেভেলপাররা তৈরি করেছেন।

কয়েকটি উদাহরণের মধ্যে রয়েছে সিগনাস সলিউশনস ইনকর্পোরেশন যা কিান সানিভেল, ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত, তাদের নিকট থেকে এসেছে GNU C এবং C++ কম্পাইলার। এক্স উইন্ডো সিস্টেমটি মূলত এক্স কনসোর্টিয়াম ( যা IBM, HP, Digital, এবং Sun এদের সমন্বয়ে গঠিত) থেকে এসেছে। এক্স কনসোর্টিয়াম: 1988 সালে প্রতিষ্ঠিত, এক্স কনসোর্টিয়ামটি এক্স উইন্ডো সিস্টেমের বিকাশ (ডেভেলপমেন্ট) এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা ছিল। ইউনিক্স-সদৃশ সিস্টেমের জন্য একটি ওপেন স্ট্যান্ডার্ড গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস তৈরী করা এদের উদ্দেশ্য ছিল। নেটওয়ার্ক ট্রান্সপ্যারেন্সি, ক্লায়েন্ট-সার্ভার আর্কিটেকচার, এবং বহুল ব্যবহৃত ডেস্কটপ পরিবেশগুলির (যেমন, GNOME, KDE) জন্য একটি ভিত্তি হিসেবে কাজ করার সক্ষমতা তৈরী করা এক্স কনসোর্টিয়ামের উদ্দেশ্য ছিল। বর্তমানে, একাধিক ইথারনেট ড্রাইভারের দায়িত্ব প্রধানত নাসার প্রকৌশলীদের উপর ন্যস্ত। এখন ডিভাইস উৎপাদনকারী প্রায়শই নিজেদের ডিভাইস ড্রাইভার নিজেরাই ডেভেলপ করে। অতীতে, ডিভাইস ড্রাইভারসমূহ প্রায়ই লিনাক্স কমিউিটি বা তৃতীয় কোন পক্ষ ডেভেলপ করত। এখন, ডিভাইস উৎপাদনকারীরা নিজেরাই ড্রাইভার বিকাশে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে, যা উন্নত সামঞ্জস্যতা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। ডিভাইস উৎপাদনকারীরা নতুন ডিভাইসের জন্য দ্রুত ড্রাইভার প্রদান করতে পারে, যা লিনাক্স ব্যবহারকারীদের জন্য আরও ভালো। ডিভাইস উৎপাদনকারীরা প্রায়ই ওপেন সোর্স কমিউনিটির সাথে সহযোগিতা করে, যা ড্রাইভারের গুণমান উন্নত করতে এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করে। এক কথায়, ওপেন-সোর্স সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট আর সাধারন (কভেশনাল) সফটওয়্যারের ডেভেলপমপ্ট একই রকম, ওপেন সোর্সের পিছনে যে প্রতিভার প্রয়োগ ঘটে, বাই-এন্ড-লার্জ (পরিশ্রমের বড় অংশে) সাধারণ সফটওয়্যারের পিছনেও একই প্রতিভা কাজ করে। *উভয় ক্ষেত্রেই সফটওয়্যারের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ডিজাইন প্রয়োজন। উভয় ক্ষেত্রেই সফটওয়্যার তৈরি করতে প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করা হয়। উভয় ক্ষেত্রেই সফটওয়্যারকে পরীক্ষা করা এবং ত্রুটি নির্মূল করা অপরিহার্য। উভয় ধরনের সফটওয়্যার উন্নয়নের জন্য প্রোগ্রামিং, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা প্রয়োজন। ওপেন-সোর্স সফটওয়্যারের জন্য কমিউনিটির সাথে সহযোগিতা করার এবং ওপেন-সোর্স টুলসমূহ ব্যবহারের সক্ষমতা অতিরিক্ত দক্ষতা হিসেবে কাজ করে।

সেই সময়ে এমপ্রেস সফটওয়্যারের ডাটাবেস উন্নয়ন টিমের একজন সদস্য গ্রান্ট গুয়েন্থার, তার সহকর্মীদেরকে বাড়ি থেকে প্রজেক্টে কাজ করার অনুমতি দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। *এমপ্রেস সফটওয়্যার একটি কোম্পানি যা ডাটাবেস সফটওয়্যার সলুশন প্রদান করে। গ্রান্ট গুয়েন্থার একটি টিমের লীডার ছিলেন, যারা কোম্পানির ডাটাবেস প্রডাক্টের বিকাশের দায়িত্বে ছিলো। গুয়েন্থার চেয়েছিলেন যে তার সহকর্মীরা প্রজেক্টের কাজ বাড়ি থেকে সহজেই করতে পারবেন, যা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং কর্মীদের সুবিধার প্রদা করবে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য, গুয়েন্থারকে একটি উপযুক্ত সমাধান খুঁজে বের করতে হয়েছিল, যা সম্ভবত তাকে নতুন প্রযুক্তি বা সফটওয়্যার সমাধান অন্বেষণের দিকে নিয়ে যায়। অফিস এবং বাড়ির মধ্যে বড় ফাইল স্থানান্তর করার জন্য একটি নিরাপদ পদ্ধতির প্রয়োজন ছিল। তারা পিসিতে লিনাক্স ব্যবহার করতো আর জিপ ড্রাইভ ব্যবহার করে বড় বড় ফাইল আনা নেয়া করতে হত। *জিপ ড্রাইভগুলি ছিল এক ধরনের পোর্টেবল ডেটা সংরক্ষণ ডিভাইস যার মধ্যে করে ব্যবহারকারী সহজেই ফাইল স্থানান্তর করতে পারে। যদিও জিপ ড্রাইভ সেই সময়ে জনপ্রিয় ছিল, তবে তাদের স্টোরেজ ক্ষমতা সীমিত (সাধারণত 100 এবং 750 মেগাবাইটের মধ্যে) এবং ডেটা স্থানান্তর গতি ছিল ধীর। 1996 সালে লিনাক্সে ভালো জিপ ড্রাইভ সাপোর্ট উপলব্ধ ছিল না। ** 1996 সালে, লিনাক্স তখনও প্রাথমিক বিকাশের পর্যায়ে ছিল, এবং সকল হার্ডওয়্যার সাপোর্টট তখনও ব্যাপকভাবে বিকশিত হচ্ছিল না। 1990-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জিপ ড্রাইভ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, কিন্তু লিনাক্সে তাদের সাপোর্ট তখনও পুরোপুরি বিকশিত হয়নি। জিপ ড্রাইভ সমর্থনের অভাবের কারণে, ব্যবহারকারীরা তাদের ডেটা স্থানান্তর করার জন্য বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছিল, যা কম সুবিধাজনক বা অদক্ষ ছিল। এই সীমাবদ্ধতা লিনাক্স ডেভেলপারদের জন্য জিপ ড্রাইভ সাপোর্ট ডেভলপমেন্টের দিকে মনোনিবেশ করার উৎসাহ তৈরি করেছিল, যাতে ব্যবহারকারীরা তাদের সকল হার্ডওয়্যার সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারে। জিপ ড্রাইভ সাপোর্ট বিকাশের জন্য লিনাক্স কমিউনিটির সাথে সহযোগিতা করা, যা রিসোর্স এবং দক্ষতা (efficiency) শেয়ার করে নেওয়ার সুযোগ দেয়।

সুতরাং গ্রান্টের কাছে অপশন ছিল: এক লিনাক্সের সলুশ বাদ দেয়া এবং দুই আরও বেশি ব্যয়বহুল মালিকানাধীন (প্রোপাইটরি) সমাধানটি ক্রয় করা বা তিন যা করছিলেন তা বন্ধ করে দেয়া এবং চার একটি ভাল জিপ ড্রাইভ ড্রাইভার লেখার জন্য কয়েকদিন সময় ব্যয় করা। তিনি চার নম্বর অপশন বেছে নিয়ে একটি ড্রাইভার লিখে ফেলেছিলেন এবং ইন্টারনেটে অন্যান্য জিপ ড্রাইভ ব্যবহারকারীদের সাথে নিয়ে ড্রাইভারটি পরীক্ষা এবং পরিশোধন (refine) করেছিলেন।

রেড হ্যাট বা অন্য কোনো সফটওয়্যার কোম্পানির জন্য খরচ বিবেচনা করুন এইভেবে যে সেই ড্রাইভারটি বিকাশ করতে এমপ্রেস এবং গ্রান্টকে অর্থ প্রদান করতে হয়েছে। **একটি ড্রাইভার বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সময়, দক্ষতা, এবং সংস্থানের উপর ভিত্তি করে উল্লেখযোগ্য খরচ হতে পারে। যদি রেড হ্যাট বা অন্য কোনো কোম্পানি এমপ্রেস বা গ্রান্টের কাছ থেকে ড্রাইভারটি লাইসেন্স করতে চায়, তাহলে তাদের একটি লাইসেন্সিং ফি প্রদান করতে হয়। যদি ড্রাইভারটি ওপেন-সোর্স হয়, তাহলে রেড হ্যাট বা অন্য কোনো কোম্পানির জন্য এটি ব্যবহার করার জন্য কোনো লাইসেন্সিং ফি প্রদান করার প্রয়োজন হবে না। ওপেন-সোর্স প্রকল্পগুলি প্রায়ই সম্প্রদায়-চালিত (কমিউনিটি ড্রিভেন), যার অর্থ হল বিকাশের খরচ এবং দায়িত্ব বিস্তৃত সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাগ হয়ে থাকতে পারে। একথা বলাই যায় যে ড্রাইভার ডেভেলপ করার খরচ হিসাব করলে তা হাজার দশেক ডলার ছাড়িয়ে যাবে, তবুও গ্রান্ট তার কাজ “দান” করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যদিও, অর্থের পরিবর্তে তিনি একটি ব্যতিক্রমী সমাধান পেয়েছিলেন তার সমস্যার জন্য, সেটি হচ্ছে এমপ্রেস প্রোগ্রামারদের বাড়ি থেকে কাজ করতে সক্ষম করতে পারা। এবং সেটিও অন্যান্য অপশন কিনতে যাওয়ার খরচের তুলনায় নামমাত্র খরচে। কোঅপারেটিভ মডেলের মতো উইন-উইন ভ্যালু প্রোপজিশ দিতে ওপেন সোর্স ডেভেলপমেনন্ট মডেল।

অনন্য সুবিধাসমূহ

(ইউনিক বেনেফিট)

বৈশিষ্ট্যকে সুবিধা বলে ভুল করা সহজ। সাধারণভাবে ওপেন সোর্স মডেল এবং বিশেষভাবে লিনাক্সের কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আর এই প্রলোভন মায়াজালে সেই বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে তাবৎ পৃথীবি এত উৎসাহের সাথে লিনাক্স গ্রহণ করছে। শত শত এমআইএস ব্যবস্থাপক আমাকে মন্তব্য করেছেন, “কেন কেউ তাদের অপারেটিং সিস্টেমের সোর্স কোড চাইবে?” বিষয়টি হলো, কেউই সোর্স কোড চায় না। কারো ফ্রি সফ্টওয়্যার লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই। সোর্স কোড হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেমের কেবলমাত্র একটি বৈশিষ্ট্য। কিন্তু কোন বৈশিষ্ট্য কেন একটি সুবিধা হতে যাবে। তাহলে সেই বৈশিষ্ট্যের সাথে কী সুবিধা জড়িত?

প্রযুক্তিগত কম্পিউটিং সম্প্রদায়ের চলমান হতাশার মধ্যেও জেনে রাখতে হবে, সর্বোত্তম প্রযুক্তিও অনেক সময়েই প্রযুক্তি বাজারে কমই জয়ী হয়। একটি ভালো ইঁদুর ধরার কল তৈরি করতে পারলেই, আপনার সফলতা নিশ্চিত হবে না। *একটি নতুন পণ্য বা পরিষেবা উদ্ভাবনের সময় শুধুমাত্র গুণমানের উপর নির্ভর না করে বাজারের চাহিদা, প্রতিযোগিতা এবং বিপণন কৌশল বিবেচনা করা উচিত। ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত করা এবং তা পরিচালনা করার কৌশল বিবেচনা করা আবশ্যক। লিনাক্স সফল হবে এইজন্যে না যে এটি অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় কম মেমরিযুক্ত মেশিনে ইনস্টল করা যায়, অথবা এটি অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের চেয়ে কম খরচে পাওয়া যায়, অথবা এই জন্যে নয় যে এটি আরও নির্ভরযোগ্য। *পণ্যের সাফল্যের জন্য প্রযুক্তিগত সুবিধার পাশাপাশি বাজারের চাহিদা এবং গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা করা প্রয়োজন। শুধুমাত্র পণ্যের প্রযুক্তিগত দিকে ফোকাস না করে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা এবং বাজারের প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করা উচিত। ‍এগুলো শুধুমাত্র কিছু বৈশিষ্ট্য যা লিনাক্সকে NT বা OS/2 এর চেয়ে একটি ভালো ইঁদুর ধরার কল করে তোলে। *NT (Windows NT): মাইক্রোসফ্ট উইন্ডোজের একটি সংস্করণ, যা ব্যবসায়িক এবং সার্ভার বাজারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। OS/2: আইবিএম এবং মাইক্রোসফট দ্বারা সম্মিলিতভাবে বিকাশিত একটি অপারেটিং সিস্টেম, যা পরবর্তীতে আইবিএমের মনোপলি হয়ে ওঠে।

(অদৃশ্য) শক্তিসমূহ যা শেষ পর্যন্ত লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ধারণ করবে, যা বিভিন্ন স্তরে প্রতিফলিত হবে। *(অদৃশ্য) শক্তিসমূহ এখানে বাজার, অর্থনীতি, সমাজ, প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কাজ করে এমন প্রভাবশালী কারণগুলিকে বোঝায়। Different Level (বিভিন্ন স্তরে): প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যের বাইরে, যেমন বাজারের চাহিদা, প্রতিযোগিতা, বিপণন কৌশল, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি। প্রকৃতপক্ষে, সাধারণত সেই কারণসমূহ “বাজার অবস্থান” (মার্কেট পজিশনিং) বিষয়ের অধীনে একত্রিত করে বিবেচিত হয়। * পণ্য বা পরিষেবার জন্য কার্যকর বাজার অবস্থান (পজিশনিং) কৌশল বিকাশের জন্য বাজার বিশ্লেষণ করা ও দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের জন্য বাজার অবস্থানের (পজিশনিং) উপর ফোকাস করা গুরুত্বপূর্ণ। লোটাসের একজন জেষ্ঠ্য নির্বাহী সম্প্রতি আমাদের জিজ্ঞেেস করেছিলে, “বিশ্বে আরেকটি অপারেটিং সিস্টেমের (OS) কেন প্রয়োজন?” *একটি নতুন পণ্য বা পরিষেবা উদ্ভাবনের আগে বাজারের প্রয়োজনীয়তা এবং প্রতিযোগিতামূলক ল্যান্ডস্কেপ বিশ্লেষণ করা ও নতুন অপারেটিং সিস্টেমের সম্ভাব্য গ্রাহকদের চাহিদা এবং পছন্দগুলি বোঝার জন্যে এইরকম প্রশ্ন অনেক মূল্যবান। লিনাক্স সফল হবে শুধুমাত্র যদি এটি “Just another OS” না হয়। অন্য কথায়, লিনাক্স কি অপারেটিং সিস্টেমের (OS) ডেভেলপমেন্ট ও ডেপলয়মেন্টের জন্য একটি নতুন মডেলকে প্রতিনিধিত্ব করে নাকি এটি “শুধু আরেকটি অপারেটিং সিস্টেম”? *Development and Deployment (বিকাশ ও বাস্তবায়ন): অপারেটিং সিস্টেম তৈরি এবং ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া। “Just another OS” (শুধু আরেকটি অপারেটিং সিস্টেম): একটি অপারেটিং সিস্টেম যা বিদ্যমান অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের মতো, কোনো উল্লেখযোগ্য নতুন বৈশিষ্ট্য বা পদ্ধতি নিয়ে আসে না।

সেটাই প্রশ্ন। আর উত্তরটি হল: লিনাক্স এবং সমগ্র ওপেন সোর্স আন্দোলন সফ্টওয়্যার ডেভেলপমেন্টের একটি বিপ্লবের প্রতিনিধিত্ব করে, যা আমরা এখন এবং ভবিষ্যতে যে কম্পিউটিং সিস্টেমসমূহ তৈরি করবো তা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত (profoundly improve) করবে।

ওপেন-সোর্স কোড একটি বৈশিষ্ট্য। নিয়ন্ত্রণই হলো সুবিধা। * প্রযুক্তিতে: নিয়ন্ত্রণ বলতে বোঝায় ব্যবহারকারী বা প্রশাসকের কাছে সিস্টেম, সফ্টওয়্যার বা ডেটার উপর কর্তৃত্ব থাকা। বাস্তব-জীবনের উদাহরণ: একটি স্মার্টফোনে, আপনি যে অ্যাপস ইনস্টল করেন, তা ব্যবহার করেন এবং সেগুলো থেকে ডেটা মুছে ফেলার ক্ষমতা আপনার নিয়ন্ত্রণের একটি উদাহরণ। প্রত্যেক কোম্পানি তাদের সফ্টওয়্যারের উপর নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ চায়, এবং ওপেন সোর্সের নিয়ন্ত্রণ বৈশিষ্ট্য অর্জিত হওয়া ইন্ডাস্ট্রির পাওয়া সেরা সুবিধা। *ওপেন সোর্স সফ্টওয়্যারে, ব্যবহারকারী এবং ডেভেলপাররা সফ্টওয়্যারের উপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন। ওপেন সোর্স লাইসেন্স প্রায়ই কম খরচে পাওয়া যায়, যা বিভিন্নন কোম্পানিকে আকর্ষণ করে। ওপেন সোর্স প্রজেক্টে বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তিদের মধ্যে সমন্বয় করা অনেক চ্যালেঞ্জিং। রিসোর্সের অসমতা (অভাব) এর কারণে সবাই ওপেন সোর্স সফ্টওয়্যারে সমভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেনা।

মহান ইউনিক্স ত্রুটি

(The Great Unix Flaw)

লিনাক্স মডেলটি অপারেটিং সিস্টেম তৈরির ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্যরূপে ভিন্ন পদ্ধতির একটি উদাহরণ হিসেবে আমি যেটা জানি, তা হলো অনেক মানুষ ফলাফলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, সেটি দেখা; উদাহরণস্বরূপ লিনাক্স অবশেষে সমস্ত ইউনিক্সের মতোই বিভক্ত (বাল্কানাইজ) হয়ে যাবে। *ইউনিক্সের বিভক্তি (বাল্কানাইজেশন): ইউনিক্স সিস্টেমগুলি সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন সংস্করণে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল, যেমন সোলারিস, এইচপি-ইউএক্স, এবিএসডি ইউনিক্স। বিভক্তির কারণের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির স্বার্থ, প্রযুক্তিগত পার্থক্য, এবং লাইসেন্সিং সমস্যা। বর্তমানে প্রায় ত্রিশটি ভিন্ন, বেশিরভাগ অসঙ্গতিপূর্ণ, ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেমের সংস্করণ রয়েছে।

কিন্তু আবার বিভিন্ন ইউনিক্সকে বিভক্তকারী শক্তিটিই সকল লিনাক্সকে একত্রিত করার জন্য কাজ করছে। * লিনাক্সের ওপেন সোর্স মডেল বিভিন্ন ডেভেলপার এবং কোম্পানিকে একত্রিত হতে এবং একই কোডবেস শেয়ার করার পথে নিয়ে যায়। লিনাক্স কমিউনিটির মধ্যে একটি সাধারণ লক্ষ্য রয়েছে, যা হচ্ছে একটি শক্তিশালী, নিরাপদ এবং বিনামূল্যের অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা, বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউশনকে একত্রিত করে।

ইউনিক্স এবং লিনাক্সের মধ্যে মূল পার্থক্য আসলে কার্নেল, অ্যাপাচি সার্ভার, বা অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের গুচ্ছ নয়। *ইউনিক্স এবং লিনাক্স উভয়েরই নিজস্ব কার্নেল রয়েছে, তবে এটি প্রাথমিক পার্থক্য নয়। উভয় প্ল্যাটফর্মেই অ্যাপাচি সার্ভার ব্যবহার করা যেতে পারে, তাই এটিও প্রাথমিক পার্থক্য নয়। ইউনিক্স প্রায়শই প্রপ্রাইটারি লাইসেন্সের অধীনে বিতরণ করা হয়, যেখানে লিনাক্স ওপেন সোর্স লাইসেন্সের অধীনে বিতরণ করা হয় (যেমন, GPL)। ইউনিক্স প্রায়শই একক কোম্পানি দ্বারা বিকশিত হয়, অপরদিকে লিনাক্স একটি সম্প্রদায়-চালিত প্রকল্প। দুটির মধ্যে প্রাথমিক পার্থক্য হলো যে ইউনিক্স শুধুমাত্র আরেকটি (just another) প্রপ্রাইটারি, শুধুমাত্র-বাইনারি বা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি (IP) ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম। একাধিক সরবরাহকারীর কাছ থেকে প্রোপাইটরি, শুধুমাত্র-বাইনারি অপারেটিং সিস্টেমের সংগ্রহের সমস্যা হলো যে সরবরাহকারীরা তাদের মার্কেটিং লক্ষ্য অর্জনের জন্য অপারেটিং সিস্টেমে ডেভেলপ করা কোন বৈশিষ্ট্য শুধুমাত্র তাদের গ্রাহকদের জন্য একচেটিয়াভাবে রেখে দিতে চান। *মালিকানাধীন সফ্টওয়্যারের উন্নয়ন সাধারণত একটি নির্দিষ্ট কোম্পানি বা ব্যক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই মালিকানাধীন সফ্টওয়্যারের লাইসেন্স ফি বা ক্রয় মূল্য প্রায়ই বেশি হয়। কালক্রমে, ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেমের প্রতিটি সংস্করণের “মালিকানাধীন উন্নয়ন” বিভিন্ন ইউনিক্সকে উল্লেখযোগ্যভাবে একে অপরের থেকে স্পষ্টতই আলাদা করে তোলে। *বিভিন্ন ইউনিক্স সংস্করণ: সোলারিস: অরাকল কর্পোরেশন (বর্তমানে ওরাকল কর্পোরেশন) দ্বারা বিকশিত। এইচপি-ইউএক্স: হিউলেট-প্যাকার্ড (এইচপি) দ্বারা বিকশিত। এবিএসডি ইউনিক্স: বার্কলি সফ্টওয়্যার ডিস্ট্রিবিউশন (বিএসডি) প্রকল্পের অংশ। এটি ঘটে যখন অন্যান্য বিক্রেতারা ইনোভেশনের সোর্স কোডে অ্যাক্সেস পায় না এবং ইউনিক্স বিক্রেতারা যে লাইসেন্স ব্যবহার করে তা সেই ইনোভেশন ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করে। এমনকি ইউনিক্সে জড়িত সকলেও যদি একসাথে নির্দিষ্টি ইনোভেশনটি ব্যবহার করতে চায়, তবুও সেটি তারা পায় না। *কঠোর লাইসেন্সিং শর্তাবলী সফ্টওয়্যারের ব্যবহারকে সীমিত করতে পারে, এমনকি ইনোভেশন ও উন্নয়নের স্বাধীনতাকেও সীমিত করতে পারে।

লিনাক্সের ক্ষেত্রে, এই চাপসমূহ (প্রেসার) উল্টোদিকে কাজ করে। যদি কোন লিনাক্স সাপ্লায়ার কোন উদ্ভাবন গ্রহণ করেন আর পরে তা বাজারে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, তাহলে অন্যান্য লিনাক্স সরবরাহকারীরা অবিলম্বে সেই উদ্ভাবনটি গ্রহণ করবে। *লিনাক্সের ওপেন সোর্স মডেল সাপ্লায়ারদের সহজেই উদ্ভাবন গ্রহণ করতে দেয়। লিনাক্স সম্প্রদায়ের সহযোগিতামূলক প্রকৃতি উদ্ভাবন দ্রুত গ্রহণে সহায়তা করে। এটি সম্ভব হয় কারণ সেই উদ্ভাবনের সোর্স কোডে কমিউনিটির অ্যাক্সেস থাকে এবং এমন একটি লাইসেন্সের অধীনে সেটি উপলভ্য থাকে, যা তাদের এটি ব্যবহার করার অনুমতি দেয়। *ওপেন সোর্স লাইসেন্স এক বৃহৎ ও বৈচিত্র্যময় সম্প্রদায়কে কোঅপরাটিভ ডেভেলপমেন্টে আকৃষ্ট করে, যা উত্তরোত্তর উন্নয়নে অবদান রাখে। GPL, MIT, Apache এই জাতীয় ওপেন সোর্স লাইসেন্স।

এটি কীভাবে কাজ করে তার একটি উদাহরণ হচ্ছে, সকল লিনাক্স সমালোচকরা অপারেটিং সিস্টেমের পতনের ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্যে একটি বিষয় ব্যবহার করেন, বিশেষ করে ১৯৯৭ সালের পুরানো libc C লাইব্রেরি এবং নতুন glibc লাইব্রেরির মধ্যেকার বিতর্ক। *লিনাক্সে উদ্ভাবন গ্রহণের প্রক্রিয়াটি বোঝার জন্য, ১৯৯৭ সালের libc এবং glibc লাইব্রেরির মধ্যে সংঘাতকে একটি মূল উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, যা প্রায়ই লিনাক্সের সমালোচকরা তাদের ভবিষ্যদ্বাণীতে ব্যবহার করেছেন। ১৯৯৭ সালে, লিনাক্স ডেভেলপাররা libc (পুরানো) এবং glibc (নতুন) লাইব্রেরির মধ্যে একটি বিতর্কের সম্মুখীন হন। libc লাইব্রেরিটি পুরানো এবং সীমিত ছিল, তার তুলনায় glibc লাইব্রেরিটি আরও আধুনিক এবং কার্যকর ছিল। লিনাক্স কমিউনিটি এই সমস্যার সমাধানে একত্রিত হয়েছিল, glibc লাইব্রেরিকে গ্রহণ করেছিল এবং libc লাইব্রেরিকে পরিত্যাগ করেছিল। রেড হ্যাট শক্তিশালী কারিগরি কারণে নতুন glibc লাইব্রেরি গ্রহণ করেছে। লিনাক্সের জনপ্রিয় সংস্করণের মধ্যে কিছু ছিল যেগুলি পুরানো libc লাইব্রেরির সাথে আটকে ছিল। বিতর্কটি মাত্র ছয় মাস ধরে চলতে থাকে। যাইহোক, ১৯৯৮ সালের শেষের দিকে, সমস্ত জনপ্রিয় লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনই হয় ইতিমধ্যেই নতুন, অধিক স্থিতিশীল, বেশী নিরাপদ এবং উচ্চ কর্মক্ষমতা সম্পন্ন glibc লাইব্রেরিতে সুইচ করে ফেলেছিল বা স্যুইচ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলো। *1998 সালটি লিনাক্সের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ সেটি এমন এক সময় ছিলো যখন কমিউনিটি নতুন, অধিক উন্নত glibc লাইব্রেরিতে স্থানান্তরিত হয়ে গিয়েছিল। এই এডাপটেশন লিনাক্স বিকাশের একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক ছিল, কারণ এটি সিস্টেমের সামগ্রিক গুণমান এবং স্থায়িত্বকে উন্নত করেছিল।

এটি ওপেন সোর্স শক্তির বহিঃপ্রকাশের একটি অংশ: এই শক্তি সাধারণ কোন রেফারেন্স পয়েন্টের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য এজাতীয় একত্রিতকরণের চাপ তৈরি করতে প্রভাব রাখে, যা এক বিরল ওপেন স্ট্যান্ডার্ড–এবং এটি এই ধরনের মিলনকে থামিয়ে দেওয়া বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির (ইন্টালেকচুয়াল প্রপার্টি) বাধাসমূহ অপসারণ করে। *ওপেন সোর্সের সকল প্রজেক্ট প্রায়শই ওপেন স্ট্যান্ডার্ডের দিকে ধাবিত হয়, যা বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করে এবং সামঞ্জস্যতা সহজতর করে। ওপেন সোর্স লাইসেন্স বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির অধিকার (ইন্টালেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস) শিথিল করে, যার ফলে ডেভেলপারদের জন্য কোড শেয়ার করতে পারা, পরিবর্তন করা এবং উন্নত করা সহজতম হয়।

আপনার বেছে নেয়ার স্বাধীনতা

যখনই কোন বিপ্লবী নতুন অনুশীলন (practice) আসে, সেখানে সর্বদা একদল সন্দেহবাদী থাকে যারা এর অবশ্যম্ভাবী পতনের ভবিষ্যদ্বাণী করে, নতুন মডেলটি সফল বলে অভিহিত হওয়ার আগে যে সমস্ত বাধা অতিক্রম করতে হবে সেগুলো তারা তুলে ধরে। *বাজার এবং প্রযুক্তি পরিবর্তিত হওয়ার সাথে সাথে, নতুন মডেল অবশ্যই খাপ খাইয়ে নিতে এবং বিকশিত হতে সক্ষম হয়। নতুন মডেল অবশ্যই ব্যবহারকারীদের চাহিদা এবং পছন্দকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও কট্টরপন্থীরা আছেন যারা জোর দিয়ে বলেন যে শুধুমাত্র নতুন মডেলের সবচেয়ে বিশুদ্ধ বাস্তবায়নই সফল হতে পারে। আর তারপর বাকি রইলাম আমরা যারা শুধু কাজ করে যাচ্ছি, পরীক্ষা করছি, নতুন কিছু তৈরি করছি এবং নতুন প্রযুক্তি মডেল ব্যবহার করছি সেই অ্যাপ্লিকেশনসমূহের জন্য যেখানে নতুন মডেলটি পুরানো মডেলের চেয়ে ভালো কাজ করে।

এই নতুন প্রযুক্তি মডেলের প্রাথমিক সুবিধা PC-এর জন্মের সময় দেখা যায়। IBM যখন ১৯৮১ সালে তার PC ‘র স্পেসিফিকেশন প্রকাশ করে, তখন সম্পূর্ণ পৃথিবী কেন পিসি কম্পিউটিং মডেলটিকে অতি উৎসাহের সাথে গ্রহণ করেছিল? *১৯৮১ সালে, IBM ব্যক্তিগত কম্পিউটার (PC) এর কারিগরি বিবরণ (স্পেসিফিকেশন) সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। PC Computing Model যেখানে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কম্পিউটার (পিসি) ব্যবহার করা যায়, যা IBM PC specification প্রকাশের পর ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছিল। বিষয়টি এমন ছিল না যে আইবিএম পিসি আরেকটি উন্নত মাউসট্র্যাপ ছিল। *এখানে একটি প্রবাদ প্রয়োগ করা হয়েছে, যার অর্থ “একটি উন্নত সমাধান”। এখানে এটি আইবিএম PC-কে তার সময়ের অন্যান্য কম্পিউটার থেকে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত হিসাবে নির্দেশ করে। অরিজিনাল 8086-ভিত্তিক PC গুলো 64K (হ্যাঁ, K) বাইট মেইন মেমরি সহ চালু হয়েছিল। *প্রথম PC যেগুলি ইন্টেল 8086 প্রসেসরের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। অত্যন্ত সীমিত (64Kilobyte) মেমরি ক্ষমতা, যা আজকের মানদণ্ড অনুসারে খুবই কম (কিলোবাইট কে গিগাবাইটের সাথে তুলনা করলে)। একটি কম্পিউটারের মেমরি যা প্রসেসর দ্বারা সরাসরি অ্যাক্সেস করা যেতে পারে, প্রাথমিক কম্পিউটিং কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য সেটিই হল Main Memory। তাদের সর্বোচ্চ মেমোরী লিমিট ছিল 640K. কেউই কল্পনা করতে পারেনি যে একজন ব্যবহারকারীর মেশিনে কখনও 640K এর বেশি মেমরীর প্রয়োজন পরবে। *এই বাক্যটি ব্যবহার করা হয়েছে ঐতিহাসিকভাবে কম্পিউটিংয়ের সীমাবদ্ধতা এবং সেই সময়ের প্রত্যাশা তুলে ধরার জন্য, বিশেষ করে ব্যক্তিগত কম্পিউটারে মেমরির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে। ডেটা ব্যাকআপের জন্য ছিল একটি টেপ ক্যাসেট রেকর্ডার।

পিসি বিপ্লবের চালিকা শক্তি কি ছিল, এটি ছিল কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্মের উপর ব্যবহারকারীদের নিয়ন্ত্রণ। তারা চাইলেই তাদের প্রথম পিসি আইবিএম থেকে, দ্বিতীয়টি কমপ্যাক থেকে এবং তৃতীয়টি এইচপি থেকে কিনতে পারত। তারা চাইলে একশোর উপরে সাপ্লায়ারদের যে কোনো একজন থেকে মেমোরি বা হার্ড ড্রাইভ কিনতে পারত, আর তারা প্রায় যেকোনো উদ্দেশ্য বা প্রয়োগের জন্য প্রায় অসীম পরিসরের পেরিফেরাল সরঞ্জাম খুঁজে পেতে পারত।

তবে এই নতুন মডেলে প্রযুক্তি, পণ্য এবং সরবরাহকারীদের মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় অসঙ্গতি (inconsistencies), অসামঞ্জস্যতা (incompatibilities) এবং বিভ্রান্তির (confusion) সৃষ্টি করেছে। কিন্তু যেমনটা বিশ্ব এখন জানে, ভোক্তারা (consumers) বেছে নেয়ার সুবিধা (choice) ভালোবাসে। ভোক্তারা পছন্দ ও নিয়ন্ত্রণের বিনিময়ে কিছুটা বিভ্রান্তি ও অসঙ্গতি মেনে নিতে রাজি হয়।

আরও লক্ষ্য করুন পিসি হার্ডওয়্যার ব্যবসায় বিভাজন ঘটেনি। স্পেসিফিকেশন সাধারণত উন্মুক্তই থেকেছে, এবং আন্তঃক্রিয়াশীলতা (interoperability) বজায় রাখার জন্য মানের (standard) সাথে সামঞ্জস্যতা নিশ্চিতকরণে শক্তিশালী চাপ অব্যাহত রয়েছে। *ইন্টারঅপারেবিলিটি নিশ্চিত করার জন্য ওপেন স্পেসিফিকেশন এবং স্ট্যান্ডার্ড বিবেচনা করে সফ্টওয়্যার সিস্টেম ডিজাইন করা, ইন্ডাস্ট্রির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকার জন্য এবং ইন্টারঅপারেবিলিটি প্রচারের জন্য সফ্টওয়্যার স্ট্যান্ডার্ড ডেভেলপ করা গুরুত্বপূর্ণ। কারো নিকটেই যথেষ্ট ভালো মাউসট্র্যাপ নেই যা দিয়ে ব্যবহারকারী আকৃষ্ট করে তাকে মালিকানা (প্রোপ্রাইটারি) মডেলে জিম্মি করে ধরে রাখার ক্ষমতা রাখে। বরঞ্চ, যত উদ্ভাবন–ভালো মাউসট্র্যাপ–যাই হোক কমিউনিটির সংগ্রহ বাড়াচ্ছে।

লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ভোক্তাদের তাদের কম্পিউটারের সাথে আসা প্রযুক্তি পছন্দ করার স্বাধীনতা দেয়, একদম অপারেটিং সিস্টেম লেভেলে। এতে করে কি ব্যবহারকারীর ওপর সম্পূর্ণ নতুন স্তরের দায়িত্ব বর্তায় এবং তার কোন নতুন দক্ষতার প্রয়োজন হয়? *ব্যবহারকারীর দক্ষতা এবং দায়িত্বের স্তর বিবেচনা করে একটি পণ্য বা পরিষেবার ব্যবহারযোগ্যতা মূল্যায়ন করা হয়। অবশ্যই।

সেই ব্যবহারকারী নতুন মডেলে বেছে নেয়ার পুলক ও স্বাধীনতা অনুভব করার পর কি প্রপ্রাইটরি বাইনারি-অনলি অপারেটিং সিস্টেম সরবরাহকারীর উপর বিশ্বাস স্থাপনে বাধ্য-হওয়ার পুরোনো মডেলে ফিরে যেতে চাইবেন? মনে হয়না।

সমালোচকেরা লিনাক্স প্রযুক্তির গুরুতর সমস্যা খুঁজেতেই থাকবেন এবং কদাচিৎ তা পেয়েও যাবেন। কিন্তু ভোক্তারা বেছে নিতে বা পছন্দ করার সুযোগকে ভালোবাসে, আর বিশাল ইন্টারনেট-ভিত্তিক ওপেন-সোর্স সফ্টওয়্যার মার্কেটপ্লেস সেসকল সমস্যার সম্ভাব্যা-সকল সমাধানের উপায় বের করে ফেলবে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

One response to “বিলিয়ে দেয়া”

  1. A WordPress Commenter Avatar

    Hi, this is a comment.
    To get started with moderating, editing, and deleting comments, please visit the Comments screen in the dashboard.
    Commenter avatars come from Gravatar.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *